মহান ভাষা আন্দোলন
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ন মুহূর্তে আনসার বাহিনী উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। মহান ভাষা আন্দোলনে ময়মনসিংহের আনসার প্লাটুন কমান্ডার আব্দুল জব্বার শহীদ হন।যার আত্নত্যাগ ও অবদানে এ বাহিনী গর্বিত।
পাক ভারত যুদ্ধ
ঐতিহাসিক পাক ভারত যুদ্ধের সময় ১৯৬৫ সালে দেশের সীমান্ত ফাড়িগুলোতে তৎকালীন ইপিআর–এর সাথে আনসার বাহিনীকে বিওপি প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়।
১৯৭০ সালের ঘুর্ণিঝড়
১৯৭০ সালের প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে আনসার বাহিনী ত্রান ও পূর্নবাসন কাজে দাযিত্ব পালন করে।
মহান মুক্তিযুদ্ধ
মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে (মুজিবনগরে) গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহনকালে আনসার প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলীর সাথে ১২ জন বীর আনসার সদস্য ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আহবানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৯ জন কর্মকর্তা, ৩ জন কর্মচারী ও ৬৫৮ জন আনসার সদস্য শহিদ হন। এ বাহিনীর ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেল ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল শক্তি। মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বাহিনীর ১ জন সদস্য বীর বিক্রম এবং ২ জন সদস্য বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ
মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এ বাহিনী গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছে। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮, সালের ভয়াবহ বন্যায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ত্রান ও পুর্নবাসন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন।
কোম্পানীগঞ্জ এর প্রাকৃতিক দুর্যোগ(বন্যা)
বিশেষ করে জুন/২০২২ খ্রি: এ সিলেট এর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা হয় । যার উৎপত্তি ছিল কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় । স্মরনকালের সর্ববৃহৎ মহাপ্লাবন যাকে বলে। উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মোছাম্মৎ সেলিনা বেগম এর নেতৃত্বে অঙ্গীভুত পিসিি, ইউনিয়ন দলনেতা/দলনেত্রী ,ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডারসহ ভিডিপি সদস্যগন বন্যার্তদের উদ্ধার করেন, শুকনো খাবার বিতরন করেন।বন্যার্ত ও বন্যা পরবর্তীতে ও বিভিন্ন ধরনের ত্রান বিতরন করেন। যার মুল্যায়ন সরুপ ভালে কাজ ও নিরলস সেবা প্রদানের জন্য বাহিনী থেকে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মোছাম্মৎ সেলিনা বেগমকে ৪৩ তম জাতীয় সমাবেশে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী-শেখ হাসিনা বাংলাদেশ গ্রামপ্রতিরক্ষা দল সেবা পদক প্রদান করেন। ৪৩ তম জাতীয় সমাবেশে -সমাবেশ পুরস্কার হিসেবে ১ম -পুরস্কার প্রদান করা হয়,অঙ্গীভুত পিসিি সুদিন দাস ও ইউনিয়ন দলনেতা মো: মইনুল ইসলাম হেলালকে প্রদান করা হয়। ৪৩ তম জাতীয় সমাবেশেএছাড়াও আরো ০১ জন দলনেতা ও ০৩ জন ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডারকে সমাবেশ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
রেলপথ ও রেলরক্ষা
অপারেশন রেলরক্ষা ২০১৩/১৪ কার্যক্রমে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরিক্ষা বাহিনীর প্রায় ৮,৩২৮ জন সদস্য ৩৬টি জেলার ১,০৪১টি ঝুঁকিপূর্ন পয়েন্টে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে সকলের আস্থা অর্জন করেছে।২০১৫ সালেও সরকারের নির্দেশে এ বাহিনীর ৮,৮৯৬ জন সদস্য ৩৭টি জেলার ১,১১২টি পয়েন্টে রেল নিরাপত্তা রক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে। গত বছর বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ০৭ জন সদস্য নিহত হয়।
সড়ক ও মহাসড়ক
রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের লক্ষ্যে ২০১৩ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সারাদেশের সড়ক ও মহাসড়কের ০৫টি ঝুঁকিপূর্ন পয়েন্টে ১২ জন করে ৬০ জন কোম্পানীগঞ্জ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে।
বিমান ও স্থল বন্দর
দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ স্থল বন্দরগুলোতে সাধারন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য-সদস্যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বপালনকালে অসীম সাহসিকতার সাথে সন্ত্রাসী মোকাবেলা করতে গিয়ে সাধারন আনসার সদস্য সোহাগ আলী নিহত হন। অতি সম্প্রতি বেনাপোল স্থল বন্দরে চোরাকারবারীর ছুরিকাঘাতে সাধারন আনসার সদস্য ফিরোজ হোসেন নিহত হন।
পার্বত্য এলাকা
পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সন্ত্রাস দমনে ১৯৭৬ সাল হতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ব্যাটালিয়ন আনসার দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ১৯ জন সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। এছাড়া প্রায় তিনশত সদস্য বিভিন্ন কারনে অকাল মৃত্যুবরন করেন। এছাড়া প্রায় শতাধিক হিল আনসার ও হিল ভিডিপি সদস্য পার্বত্যাঞ্চলে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে ও সংঘাতে নিহত হন।
নির্বাচন
জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন নির্বাচনে জননিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রয়েছে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা। বিশেষ করে মহিলা নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েনের ফলে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে মহিলা ভোটারের উপস্থিতি বর্তমানে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে আমাদের অনেক সদস্য-সদস্যা গুরুতর আহত ও নিহত হয়েছেন। গত বছর ০৫ জন ভিডিপি মহিলা সদস্যসহ ০১জন পুরুষ সদস্য বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্বপালনকালে নিহত হন।
আভিযানিক
এছাড়া হলি আর্টিজানসহ বিভিন্ন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার, সম্মুখ যুদ্ধ, নাশকতার ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক সদস্য-সদস্যা গুরুতর আহত হয়।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে
ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। খেলাধুলার চর্চা ও জাতীয় ক্রীড়া বিকাশে উল্লেখযোগ্য আবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৪ সালে এ বাহিনী ‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করে। বাহিনীর ক্রীড়াদল পর পর ৪ বার বাংলাদেশ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।গত বছর বিভিন্ন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এ বাহিনীর ক্রীড়াদল ৯৮ টি, স্বর্ণ, ৭১ টি রৌপ্য ও ৭৭ টি ব্রোঞ্জপদক সহ ১০ টি ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ক্ষেত্রে ০৯টি স্বর্ণ, ০৭টি রৌপ্য, ও ১১টি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস